বিভিন্নমুখী ফিতনা ইসলামকে দুর্বল করে দিচ্ছে
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে “ঘরের শত্রু বিভীষণ” বাইরের
শত্রু যতটুকু ক্ষতি করতে পারে, তার চেয়ে
বেশি ক্ষতি করত সক্ষম ঘরের শত্রু । ইসলাম্রের অবস্থাও আজ সেরকম । রাসুল
(সাঃ) –এর সময় থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলে আসছে । আজো
এই ষড়যন্ত্র শুধু মুসলমানে শারীরিক ধ্বংস নয়, বরং তাহাদের আদর্শ,ধর্মীয়নীতি সমূলে
উৎখাত করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে । ইসলামের উপর বাইরের থেকে যেমন বিধর্মীরা ষড়যন্ত্র
চালিয়ে যাচ্ছে তেমনি ভিতর থেকে ষোড়যন্ত্র করছে মুসলমান নামধারী ওহাবী, কাদিয়ানী,
বাহাই, মসীহী জামায়াত প্রমুখরা। কাদিয়ানী, বাহাই, মসীহী জামাপ্রমুখদের ইসলামের
গণ্ডি থেকে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে । কিন্তু এদের চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে সুন্নী
নামধারী ওহাবীরা । এরা এমন সব নিয়মনীতি পালন করে ও প্রচার করে যা ইসলামের মূল
ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয় । ওহাবীদের কার্যকলাপের দরুন ইসলামের সৌন্দর্য, আদর্শস্লান
হতে চলেছে । এরা এখনো বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে অপতৎপরতা চালিয়ে চাচ্ছে ।
ওহাবী
আঠার শতকে আরবের হেজাজ প্রদেশে
মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব তুর্কী
সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য একটি দল গঠন করে এক পর্যায়ে মক্কা ও মদিনা
দখল করে । আব্দুল ওহাব যুদ্ধ করেই ক্ষ্যান্তছিল না । সে ধর্মের মধ্যে আর কিছু
অধর্মোচিত আচরণ ঢুকিয়ে ওহাবী মতবাদ চালু করে । এরা পৌত্তলিকতার দোহাই দিয়ে
অলি-আওলিয়া, এমন কি সাহাবি ও নবী রাসুলদের মাজার জিয়ারত করতে বাধা দিত । তাই ওহাবি মতের প্রবর্তন আব্দুল ওহাব
১৮০৪ সালে মদিনায় বিশ্ব নবী (সাঃ) এর রওজা শরিফ ভেঙ্গে দেয় বলে জানা যায় । যে ব্যাক্তি
বা মতবাদ বিশ্ব নবী (সাঃ)এর রওজা ভেঙ্গে দেয় তারা যে ইসলামের কত বড় শত্রু তা বলার
অপেক্ষে রাখে না ।
বৃটিশ শাসনামলে মুসলমানদের
শক্তিকে চূর্ন বিচুর্ন করার জন্য ইংরেজরা এদেশে ওহাবী মতবাদ প্রসারে মদদ যোগায় ।
এক্ষেত্রে তারা ওহাবী মতবাদ প্রচারের জন্য ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার
সুযোগ করে দেয় । দেওবন্দ থেকে পুরো ভারতে ওহাবি মতবাদ ছড়িয়ে মুসলমানদের ঈমান আকিদা
নষ্ট করার অপচেষ্টা চালায় ।
ওহাবী আকিদা সমুহের মধ্য কিছু
আকিদাঃ-
১।মাইকে আজান দেওয়া যাবে না ।
২ । মিলাদ শরিফ পড়া যাবে না ।
৩। নবী-সাহাবী,পীর-আওলীয়ার
মাজার জেয়ারত করা যাবে না ।
৪ । কোন পীর-আওলীয়াকে সম্মান
করার দরকার নেই ।
৫। নবী-রাসুল, ওলী-আওলীদের
অতিরিক্ত সম্মান করা যাবে না ।
৬ । মুসলমানদের কোন রানৈতিক
কাজে অংশ নিতে পারবে না ।
৭। হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) আমাদের
মত মানুষ ।
৮ । কোন সুন্নাতকেই বিশেষ
মর্যাদায় অভিষিত করা যাবে না । (নাউযুবিল্লাহ) ।
কাদিয়ানী
জামাত
মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(১৮৩৫-১৯০৮) প্রতিষ্ঠা করে
আহমদী জামাত ও প্রতিষ্ঠাতার নামানুসারে তা কাদিয়ানী মতবাদ বা ফিতনা নামে পরিচিত
জামাত । কাদিয়ানী আরবি,ফার্সী, উর্দু
ভাষায় যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করে এবং উর্দূ সাহিত্যের একজন শক্তিমান লেখক ছিল। বৃটিশ
সাম্রাজ্যের স্বার্থে ইংরেজরা মুসলমান্দের শক্তি দুরবল করার জন্য কাদিয়ানীকে দিয়ে
নতুন মত তৈরি করে । হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) এর পর কোন নবী আসতে পারেন এই ফতোয়া দিয়ে সে
নিজেকে নবী দাবী করে এবং কাদিয়ানী মতবাদ প্রচার শুরু করে । কাদিয়ানীর জীবন
পর্যালোচনা করে দেখা যায় সে প্রথম জিবনে মুহাম্মদ (সাঃ) এর শেষ নবী হওয়ার ব্যপারে
দূঢ় বিশ্বাস ছিল । পরবর্তীতে প্রচার করে মুহাম্মদ (সাঃ) এর পরেও নবী আসতে
পারে । শেষ পর্যায়ে সে নিজেকে নবী বলে
দাবী করে বসে ।
কাদিয়ানীরা নিজেদের মুসলমান
বলে দাবী করে থাকে । তারা কোরআন ও হাদিসকে বিকৃতভাবে বিশ্বাস করে ।
নামাজ,রোজা,হজ্জ্ব,যাকাত,বেহেস্ত-দো্যখ প্রভৃতি বিষয়ে তারা মুসলমানদের থেকে
ভিন্নমত প্রকাশ করে থাকে। এ বিষয়ে মির্জা গোলাম আরবী,ফার্সী,উর্দূ ভাষায় প্রায়
৯০টি পুস্তক লিখে গেছে । সে দাবী করে যে, ১২০০ হিজরি পর্যন্ত মুহাম্মদ (সাঃ)এর
শরিয়াত কার্যকর ছিল । এর পর এর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে । তাই আল্লাহ মির্জা
গোলামকে নবী হিসাবে প্ররন করেছেন এভবফ তার সাথে কথোকপথন করেন ।
কাদিয়ানীদের প্রধান কার্যালয়
লন্ডনে অবস্থিত । বাংলাদেশের প্রধান অফিস বখশি বাজারে । এ দেশে কাদিয়ানী ধর্মের
বিস্তার শুরু হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সৈয়দ মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদের কাদিয়ানী মত
গ্রহনের মধ্য দিয়ে । আব্দুল ওয়াহেদ ১৯১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ কাদিয়ানী মতবাদ প্রচার
শুরু করে । বর্তমানে সারা দেশে ৯৩টিরও বেশি অঞ্চলে অদের জামাত রয়েছে ।
কাদিয়ানী
আকিদা সমুহের মধ্যে কিছু আকিদাঃ-
১। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) শেষ
নবী নন এবং তার নবুয়ত ১২০০ হিজরি পর্যন্ত বলবৎ ছিল ।
২। মির্জা গোলাম আহম্মদ হলেন
সত্য নবী ।
৩ । শ্রনী
রামচন্দ্র,বুদ্ধ,নানক,শ্রীকৃষ্ণ প্রমুখ নবী ছিলেন ।
৪ । মির্জা গোলাম কাদিয়ানী
ইমান মেহেদী(আঃ) ।
৫ । নবুয়তের দরজা এখনো খোলা
আছে ।
৬ । কোরআন শরিফ বিকৃতকরণ যায়েজ
আছে ।
৭ । সহীহ হাদিস বর্জন করা যায়
।
৮ । মৃত্যুর পর সব ধর্মের লোক
জান্নাতে যাবে ।
৯। মির্জা আহম্মদ কাদিয়ানী সকল
নবীর প্রতিচ্ছবি ।
১০ । মির্জা আহম্মদ কাদিয়ানী
একমাত্র শাফায়াতকারী ।
১১ । মির্জা আহম্মদ কাদিয়ানীর
জন্যই আসমান, জমিন সৃষ্ট করা হয়েছে ।
১২ । মির্জা গোলাম কাদিয়ানির
করা হাদিস, তার পরিবার আহলে বায়াত,তার সহচর আসহাব,তার স্ত্রী উম্মুল মুমিনিন ।
১৩। মির্জা আহমদের মসজিদে হল
মসজিদে আকসা,তার কবর বেহেশতের বাগান,তিনি রাহমাতুল্লিল আলামিন ।
১৪। মোহাম্মদ (সাঃ)এর অনুসরনে
মুক্তি নেই, মির্জা গোলামের অনুসরনে মুক্তি আছে ।
১৫ । খোলাফায়ে রাশিদিনের পর
থেকে মুসলমানদের জন্য জেহাদ করার নির্দেশ রহিত হয়ে গেছে ।(নাউযুবিল্লাহ)
বাহাই জামাত
কাদিয়ানিদের মত মুসলমানদের
মধ্য থেকে আরো একটি বাতেল দল হল বাহাই জামাত । তাদের মতে বর্তমানে আধুনিক যুগে(১৯ শতকে)
ইসলামী শরিয়াত বাতিল হয়ে গেছে। তাই আল্লাহ নতুন রুপে বাহাউল্লাহর মধ্যে আবির্ভুত
হয়েছেন। তিনি একজন নবী । তার কথা কাজ প্রকৃত পক্ষে আল্লহর কাজ । তাই
সবার কর্তব্য তাকে মান্য করা । বাহাই হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে নবী হিসাবে স্বীকার
করে বটে,তবে বর্তমানে তার প্রয়োজনিয়তা নেই
বলে দাবি করে । ইরানের মির্জা আলী মুহাম্মদ(১৮১৯-১৮৫০) নিজেকে বার,ইমান
মেহেদী,নবী হিসাবে দাবী করে । এবং ১৮৪৪ সালে বাহাই ধর্ম প্রবর্তন করে । কোরআন শরিফের পরিবর্তে আল বয়ান নামক গ্রন্থ
তারা একমাত্র পালনীয় এবং মান্যগ্রন্থ হিসাবে ঘোষণা করে । ১৮৬৩ সালে মির্জা আলী
মুহাম্মদের ভাবশিষ্য মির্জা হোসেন আলী(১৮১৮-১৮৯২) নিজেকে বাউল্লাহ বা আল্লহর
জ্যোতি হিসাবে দাবী করে বাহাই ধর্মের পূর্নতা দেয় । বাহুল্লাহই বাহাই ধর্মের
প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা । তার শরিয়াতী কিতাবের নাম “কিতাব-ই-আকদাস
।
বাহি জামাতের লোকোরা নিজেদের মুসলমান
বলে দাবী করে এবং মুহাম্মদ (সাঃ) এর পরে কোন নবী আসবেনা বলে বিশ্বাস রাখে । তারা
নামাজ পরে, রোজা রাখে, তবে নিজেদের পদ্ধতিতে । হজ্জ্বের মত তাদের তীর্থস্থান হল
ইসরাঈলের আকাতে । এখানে থাকা বাহাউল্লাহর কবর দর্শন করা প্রতিটি বাহাইরের জন্য
বাধ্যতামূলক । বাহাইর জামাতের আকিদা সমুহঃ –
১। সব জিনিস পবিত্র
২। বীর্যপাতে কেহ অপবিত্র হয় না
।
৩।সব কিছুই পানাহার জায়েজ ।
৪। দুটির বেশি বিবাহ নিষিদ্ধ ।
৫ । মেয়েরা পিতার সম্পত্তির
অংশ পাবে না ।
৬ । বাহাউল্লাহর কবরের দিকে
মুখ করে নামাজ পড়তে হবে ।
৭। কুমারিকে সেবিকা হিসাবে
নিয়োগ দেওয়া যাবে ।
৮ । ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে বিয়ে
করা যাবে ।
৯ । স্পতাহে একবার গোসল করলেই
চলবে ।
১০ । মস্তক মুন্ডব করা যাবে না
।
১১ । বাহাইরা সাক্ষাতে সালামের
পরিবর্তে বলে আল্লাহ আবহা ।
১২ । তাদের মাস ১৯ দিনে এবং ১৯
মাসে এক বছর হয় ।(নাউযুবিল্লাহ)
খতমে নবুয়াত অস্বীকার এবং
ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান লঙ্ঘন করায় ইরান সরকার বাহাইদের অমুসলিম হিসাবে
ঘোষণা দেয় । ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে মির্জা মুহাম্মদকে মৃত্যুদন্ড ও মির্জা হোসেন আলী
বাহাউল্লাহকে নির্বাসনে পাঠান । বাহুল্লাশর জিবিতাবস্থাতেই ১৮৭২ সালে সুলেমান খান
ওরফে জামাল আকেন্দি এদেশে বাহাইর ধর্মের প্রচার শুরু করতে আসে । ১৯৫২ সালে ঢাকায়
প্রথম স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদ, পরে ১৯৭২ সালে জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদ গঠন করে ।
ঢাকার শান্তিনগরে তাদের প্রধান কার্যালয় । বাংলাদেশে বর্ত্মানে এদের সংখ্যা প্রায়
৩০ হাজারের ও বেশি আছে বলে ধারণা করা হয় ।
বাংলাদেশে বাহাইরা তাদের বাতিল
আকিদা প্রচারের জন্য তখন ১৫০টি অফিস স্থাপন করেছিল । ১ ৯ দিবসে ভোজানুষ্ঠান নামের
একটি মাসিক পত্রিকা ইংরেজি ও বাংলায় প্রকাশ করত । এছাড়াও বাহাই ধর্মের গুনকীর্তনের
বিভিন্ন বাংলা বই তারা প্রকাশ করেছিল ।
মসীহী জামাত
মসীহী জামাতের মুল তত্ত্ব
নেওয়া হয়েছে খৃষ্টান ধর্ম থেকে । তারা ধর্ম প্রবর্তক হিসাবে ইসা(আঃ) কে মান্য করে
আবার হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কেও অস্বিকার করে না । এই জামাতের লোকদের পরিচয় হলো ইসয়ী
মুসলমান । তাদের উপাসনাস্থানের নাম এবাদাত খানা । তারা তাদের ধর্মীয় পরিভাষায়
ইসলামী শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকে । মুসলমানদের মত পাঞ্জাবী-পায়জামা,টুপী পড়ে,
দাড়ি রাখে । সাপ্তাহিক ছুটি পালন করে শুক্রবার । মসীহী জামাতের লোকরা মুলত খৃষ্টান
হলেও তারা নিজেদের যেমন খৃষ্টান দাবী করে না, তেমনি মুসলমানও দাবী করে না ,বরং
ইসায়ি মুসলমান দাবী করে । তাদের ধর্মের গ্রন্থাবলীতে বাইবেল ও কোরানের অনেক
উদ্ধৃতি দেখা যায়। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে
প্রথম মসীহী জামাত প্রতিষ্ঠিত হয় । জামাতের পরিচালক হলো মি.এম.এ ওয়াহাব । সে ৭৬
সালে ধর্মান্তিরত হয়ে পশ্চিম জার্মানিতে ধর্মের উপর কয়েকটি প্রশিক্ষণ নেয় ।
আরবী,ইংরেজী ও বাংলায় পারর্শিতা অর্জন করে । মসীহি জামাতের অফিস প্রথমে হ্য
বরিশালের কুমার খালিতে । বর্তমানে এর প্রধান কার্যালয় রয়েছে মোহাম্মদপুর । Call of hope,aehsan of Bangladesh কিতাবুল মোকাদ্দাস
প্রশিক্ষণকেন্দ্র প্রভুতির মাধ্যমে তাদের মত প্রচার করে আসছে ।