Header Ads

আটরশির পীর বিশ্ব ওলী খাজাবাবার কিছু কারামাতঃ

 

বিশ্বওলী খাজাবাবা হযরত ফরিদপুরী(কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের একটি কারামাতঃ
পাকিস্তান আমলের কথা। বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফের তখন প্রাথমিক অবস্থা। হুজুর কেবলাজানের বুজুর্গীর কথা তখন সবেমাত্র মুখে মুখে প্রচারিত হচ্ছে। সে সময় স্থানীয় লোকজন হুজুর কেবলাকে নিছক একজন মাওলানা হিসেবে বিবেচনা করতো। তাঁর কাছে দুর দুরান্তর থেকে লোকজন আসে, আবার সাথে নিয়ে আসে হাঁস, মুরগী, চাল, ডাল, গরু, টাকা পয়সা। স্থানীয় পীর ওলী বিরোধী আলেম মাওলানাদের এটা সহ্য হতোনা। দুর দুরান্তর থেকে আগত জাকেরদেরকে তারা পথে ঘাটে নানা কটুক্তি করতো, পীর কেবলাজানের কাছে যাওয়াটাকে হাস্যকর ঘটনা মনে করতো। অনেকে জাকেরদের দরবার শরীফে যাওয়ার পথে উত্যক্তও করতো। স্থানীয় আলেম সমাজ জাকেরদের এটা সেটা নজরানা নিয়ে যাওয়াকে নাজায়েজ তথা শরীয়ত বিরোধী বলেও প্রচার করতো। বিশেষ করে খাজাবাবা সূদুর শেরপুর থেকে ফরিদপুর জেলার আটরশি এসে এখানে আস্তানা করেছেন, আর তাঁর কাছে মানুষ এটাসেটা নিয়ে যায়, তা তাদের সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছিল। হুজুর কেবলার কাছে লোকজনের যাওয়া আসা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এটা তাদের জন্য খুবই অসহনীয় ঠেকছিলো। তাই হুজুর কেবলাকে সেখান থেকে কিভাবে বিতাড়িত করা যায় তার ফন্দি খুজে বেড়াচ্ছিল। এরই প্রেক্ষিতে স্থানীয় আলেমগণ বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র ও মসজিদের মুসুল্লীদেরকে নিয়ে দরবার শরীফের অদুরে একটি বায়েছ অনুষ্ঠানের আয়োজন করলো। তাদের সিদ্ধান্ত ছিল যে বায়েছে হুজুর কেবলাকে আমন্ত্রন করে আনবে এবং সেখানে তাঁকে নানা রকম প্রশ্ন করা হবে, হুজুর যদি কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হন তাহলে হুজুরকে আটরশি থেকে উচ্ছেদ করে দেয়া হবে। তারা একটা তারিখ নির্ধারণ করলো এবং কতিপয় লোক দরবার শরীফে এসে হুজুরকে সে বায়েছে নিমন্ত্রন করে গেলো। হুজুর সাদরে সে আমন্ত্রন গ্রহণ করলেন। ঘটনার দিনটি ছিল রবিবার। তখন রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। ছুটির সুবাদে দরবার শরীফের প্রবীণ জাকের ওসমান ডাক্তার দরবারে গেলেন। দরবারে যাবার পথে তিনি শুনে এসেছেন আজ দরবার শরীফের অদুরে বায়েছ হবে, সেখানে হুজুর পাকের যাওয়ার কথা। ওসমান ডাক্তার খুবই সৌখিন লোক ছিলেন। তিনি পাঞ্জাবীর সাথে ধুতি পড়তেন। ধুতি পড়েই সেদিন দরবারে গিয়েছিলেন। তিনি দরবারে গিয়েই হুজুর পাকের সাথে দেখা করতেই হুজুর বললেন, ডাক্তার সাহেব এসেছেন? আজ বাবা আমার একটা দাওয়াত আছে। আমিতো যেতে পারবো না, আমার পরিবর্তে আপনি সে দাওয়াতে যাবেন। ওসমান ডাক্তারের তো মাথায় বাজ পড়লো। তিনি ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বায়েছে গিয়ে তিনি কি করবেন। পীরের হুকুম অমান্যও করতে পারছেন না। ভিতরে ভিতরে ভয়ে শুকিয়ে গেলেন। দুপুর বেলা যেতে হবে। তিনি দরবার শরীফের বিভিন্ন স্তরের খাদেমদের কাছে গিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললেন, ভাইজান, আজই আমার জীবনের শেষ দিন। হুজুর আমাকে বায়েছ অনুষ্ঠানে পাঠাবেন, আমিতো কোরান হাদিসের কিছুই জানিনা। মাদ্রাসার ছাত্র ও মুসুল্লীদের মার খেয়ে সেখান থেকে আজ আর ফিরে আসতে পারবো না। যোহরের নামাজের পর হুজুর কেবলাজানকে কদমবুছি করে ওসমান ডাক্তার রওনা হলেন। তিনি বায়েছ অনুষ্ঠানে গিয়ে হুজুর কেবলা তাকে পাঠিয়েছেন শুনেই উপস্থিত মাওলানারা ক্ষেপে গেল। একেতো হুজুর নিজে যাননি, তারপর পাঠিয়েছেন দাড়িহীন ধুতিপড়া এক ব্যক্তিকে। তারা খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়ল। ওসমান ডাক্তার ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলেন। না জানি কোন দিক থেকে লাঠির আঘাত মাথায় এসে পড়ে। তিনি ধৈর্য্য সহকারে উপস্থিত আলেমদেরকে বললেন, আপনারা আমাকে যা ইচ্ছে করেন আমার পীরকে নিয়ে কিছু বলবেন না। তারা তখন বলল, ঠিক আছে আমরা যা প্রশ্ন করবো তোমাকে তার জবাব দিতে হবে। তিনি কিছুই বললেন না, হুজুর কেবলার জন্য যে চেয়ারখানা নির্দিষ্ট ছিল তার পিছনে দাঁড়িয়ে রইলেন। তার ডানে বায়ে বড় বড় পাগড়ীওয়ালা আলেম সকল কিতাবের স্তুপ নিয়ে বসে আছে, তিনিতো এসব জীবনে স্পর্শ করেও দেখেননি। তিনি মনে মনে বলতে লাগলেন - খাজাবাবা আমাকে প্রাণে মারার জন্য এখানে পাঠিয়েছেন। মাঠ ভর্তি লোকজন, তাদের কারও হাতে লাঠি সোটাও রয়েছে। কারণ তাদের আজকের পরিকল্পনাই হচ্ছে হুজুরকে আটরশি থেকে তাড়িয়ে দেয়া। যাহোক বায়েছ অনুষ্ঠান শুরু হলো। ওসমান ডাক্তার হুজুর কেবলার চেয়ার ধরে দাড়িয়ে আছেন। পীর ফকিরদের সম্পর্কে নানা কটুক্তিসহ কয়েকজন অতিথি ওয়াজ করলেন। তারপর তাদের মধ্য থেকে ওসমান ডাক্তারকে প্রশ্ন করা শুরু হলো। কোরান হাদিস কিছুই যিনি পড়েননি তাকে সম্মুখীন হতে হলো একদল প্রবীণ আলেমের। কি উত্তর দিবেন তিনি। চোখে মুখে আতংক। তিনি উপস্থিত লোকজনের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছেন। হঠাত তার চোখে পড়ল সভার লোকজনের মাথার উপরে বিরাট একটি পর্দা। আর সে পর্দার গায়ে মাওলানা সাহেবের প্রশ্নের উত্তর। তিনি পর্দার গায়ে লেখা উত্তর দেখে প্রশ্নের উত্তর দিলেন। এভাবে যত প্রশ্ন করা হচ্ছে ততই পর্দার গায়ে উত্তর ভেসে আসছে। কোন উত্তর কোন কিতাবের কোন অধ্যায়ে, কত পৃষ্ঠায় রয়েছে সব ভেসে উঠছে। ওসমান ডাক্তারকে তখন কোন প্রশ্ন করেই আর আটকানো যাচ্ছেনা। আলেমগণ ঘাবড়িয়ে গেলো, আটরশির পীরের ধুতিপড়া মুরিদ এত কিতাবের নাম তার পৃষ্টা নম্বর সহকারে বলে দিচ্ছে, পীর সাহেব নিশ্চয় অনেক কিছুই জানেন। তখন তারা প্রশ্ন করা ছেড়ে ওসমান ডাক্তারের হাতে হাত মিলিয়ে বলল, ভাই না বুঝে আপনাকে অনেক কথা বলেছি, মা করে দিবেন। ওসমান ডাক্তার বললেন, মাফ যদি চাইতে হয় আমার পীরের কাছে গিয়ে চান, আমি যা কিছু বলেছি সবই তাঁর শিখিয়ে দেয়া। প্রকৃত ঘটনা তিনি গোপন রাখলেন। এরপর থেকে স্থানীয় লোকেরাও দরবার শরীফে আসা শুরু করলো। দলে দলে আলেম সকল পীর কেবলাজানের সত্য তরিকা গ্রহণ করতে লাগল।


কারামতে আউলিয়া-২
হযরত ইমাম জাফর সাদেক (রঃ) এর কারামতঃ

ইমাম জাফর সাদেক (রঃ) ছিলেন হযরত হোসাইন (রাঃ) এর নাতী। বিখ্যাত ফকীহ, আবেদ ও মহান সাধক। ইমাম জাফর সাদেক (রাঃ) ১৪৮ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।
আল-লাইছ বিন সাদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ১১৩ হিঃ সনে হজ্জ করতে মক্কায় আসি, আমি ক্লান্তি দূরীকরণার্থে আবূ কোবাইস পর্রতের (কাবা ঘরের পূর্ব দিকে অবস্থিত) পাশে এসে আছর নামাজ আদায় করলাম। হঠাত একজন বসা ব্যক্তিকে দোয়া করতে দেখলাম। তিনি দোয়ায় বললেন-
ইয়া রব! ইয়া রব! (হে প্রভু! হে প্রভু) ইয়া আল্লাহ! ইয়া আল্লাহ!
ইয়া হাইউ! ইয়া হাইউ!! (হে চিরঞ্জীব)
ইয়া রাহীম! ইয়া রাহীম!! (হে দয়ালু)
ইয়া আরহামার রাহীমিন! (হে মহান দয়ালু)

এভাবে দোয়া করতে করতে তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এভাবে তিনি সাতবার দোয়া করলেন। এরপর তিনি বললেন-হে আল্লাহ! আমার মন চায় কিছু খেজুর খেতে। আপনি আমাকে খাওয়ান। হে আল্লাহ! আমার এ চাদর দুখানা জীর্ণ হয়ে গেছে।
আললাইছ বলেন,- আল্লাহর শপথ! তার দোয়া শেষ হতে না হতেই তার কাছে একটি ঝুড়ি ভর্তি আঙ্গুর আসল। অথচ তখন আঙ্গুরের মৌসুম ছিল না এবং নতুন দুখানা চাদর আসল। তিনি খেতে উদ্যত হলে আমি বললাম, আমি আপনার অংশীদার। আমি আপনার দোয়ার সময় আমীন! আমীন!! বলেছি! তিনি আমাকে তার সামনে গিয়ে খেতে বললেন, কিন্তু যতই খাই শেষ হয়না। আমি এত সুস্বাদু আংগুর কখনও খাইনি। কিন্তু, পাত্রের আঙ্গুর ভর্তিই রয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন, এ দুটোর যেটি পছন্দ করেন নিন। আমি বললাম, চাদরের প্রয়োজনীয়তা আমার নেই! তিনি আমকে বলেলেন, আপনি একটু আড়াল হন, আমি এ দুটি পরিধান করি। আমি আড়াল হলে তিনি একটি পরলেন এবং অপরটি জড়ালেন। পূর্বের চাদর দুটি হাতে নিয়ে তিনি নেমে আসলেন। আমি তাকে অনুসরণ করলাম। আমরা সাইর নামক স্থানে এসে পৌছলে এক ব্যক্তির সাথে দেখা হল। তিনি বললেন, আমাকে পরিচ্ছদ ‍দিন, আল্লাহ আপনাকে দিবেন! হে রাসূলের নাতি! রাসূলের নাতি! তিনি ঐ ব্যক্তিকে উহা দিয়ে দিলেন। আমি তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এই ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, জাফর বিন মুহাম্মাদ বিন হুসাইন বিন আলী
আললাইছ বললেন,
আমি তার কথা শোনার জন্য তাকে খুঁজতে লাগলাম, কিন্তু তাঁকে পেলাম না।

(তথ্যসূত্রঃ ১।হুলিয়াতুল আওলিয়া-৩১৯২ ২. আউলিয়া কেরামের কারামত ও কাশফ।)




কারামতে আউলিয়া-৩
বনের পশু কামেল পীরের কথা শুনে
ফরিদপুর জেলার বাহাদুরপুর এলাকার একজন চাষী তার দুই বিঘা জমিতে আখের চাষ করে সন্তান-সন্ততি ও পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এক পর্যায়ে তার আখ ক্ষেতে ভীষন শিয়ালের উপদ্রব শুরু হলো। প্রতি রাতে দলবদ্ধ ভাবে শিয়াল ক্ষেতের আখ খেয়ে ফেলে। নানা কৌশল অবলম্বন করেও শিয়ালের আক্রমন থেকে ক্ষেতের আখ রক্ষা করা যাচ্ছেনা দেখে খুব শক্ত করে ক্ষেতের চারদিকে বেড়া দিলেন।
কিন্তু এতে ফল হলো উল্টো। শিয়ালের আক্রমন আরো বেড়ে গেল। এখন দলে দলে অনেক শিয়াল একত্রে এসে ক্ষেতের বেড়া ভেঙ্গে আগের চেয়েও বেশি আখ নষ্ট করে ফেলতে লাগলো। বেচারা গরীব চাষী একেবারে নিঃস্ব হওয়ার পথে। শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না দেখে একজনের পরামর্শে আটরশির বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে গিয়ে যামানার মহা ইমাম, মহা মুজাদ্দেদ বিশ্বওলী হযরত শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) কেবলাজন হুজুরের কাছে তার দুরাবস্থার কথা জানালেন এবং শিয়ালের উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হুজুর কেবলাজানের দয়া ভিক্ষা চাইলেন। লোকটির অসহায় অবস্থার কথা শুনে মানব দরদী, কামেল মোকাম্মেল ওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেব অত্যন্ত মধুর কন্ঠে আগত চাষীকে এক অভিনব এবং আশ্চর্য উপদেশ দিয়ে বললেন,“ বাবা আপনি গিয়ে আখ ক্ষেতের বেড়া খুলে দিবেন। তার পর আবার যখন শিয়াল আসবে তখন আপনি শিয়ালদের দলপতিকে উদ্দেশ্যে করে খুব বিনয়ের সাথে বলবেন, দেখেন আমি খুব গরীব মানুষ। এই আখ ক্ষেতের আখ বিক্রি করেই আমার স্ত্রী-পুত্র পরিজন নিয়ে কোনমতে বেঁচে আছি। আপনারা আমার আখ ক্ষেতের আখ খেয়ে ফেললে আমি ছেলে মেয়ে নিয়ে বাঁচবো কি করে? তাই আমার অনুরোধ আপনারা এসে দু চারটা আখ খেয়ে চলে যাবেন। এ পর্যন্ত বলেই কেবলাজন হুজুর তাকে নির্দেশ দিলেন, “যান বাবা, যেভাবে বললাম সেভাবে কাজ করেন গিয়ে।”
অতঃপর বাহাদুরপুরের সেই আখচাষী বাড়ীতে গিয়ে ক্ষেতের বেড়া খুলে দিলেন এবং রাতের বেলায় শিয়ালের আগমনের প্রতিক্ষায় থাকলেন। এক সময় দলপতির নেতৃত্বে একদল শিয়াল আখ ক্ষেতে এসে ঢুকে পড়বে, ঠিক সেই সময় উক্ত চাষী হযরত কেবলাজান হুজুরের শেখানো কথা গুলোই দলপতিকে উদ্দেশ্য করে বললেন। এতে আশ্চর্য কাজ হলো, শিয়ালগুলো আখ ক্ষেত ছেড়ে চলে গেল। আর কখনো দু‘চারটি আখ খেতেও আসেনি।
বিশ্বওলী, মহাওলী, শতাব্দীর মহা কামেল হযরত শাহসূফী ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেব এভাবে বনের পশুকেও বশীভুত করার বিস্ময়কর কৌশল অতি সাধারণ মানুষকেও শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। একমাত্র বিশ্বাসী আশেক হৃদয় ছাড়া মাশুকের প্রেমের খেলা বুঝতে পারেনা।
(তথ্যসূত্রঃ বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) এর কতিপয় অবিস্মসরণীয় কারামত, শিকদার তোফাজ্জল হোসেন।)

Powered by Blogger.