Header Ads

জাহেলিয়াতের সমাজ ব্যবস্থা বনাম আমাদের সামাজিক অবস্থা


 বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর আবির্ভাবের পূবে আরবসহ গোটা বিশ্ব ছিল জাহেলিয়াতরে চরম তমসায় আচ্ছন্ন। ধর্মীয় কুসংস্কার,সামাজিক

অনাচর,অরাজকতা,হানাহানি,বিশৃঙ্খলা আর অর্থনৈতিক বিপর্যয় বিরাজ করছিল সমগ্র আরব সমাজে। ঐতিহাসিকগন এ চরম বীভৎস যুগকে the age of ignorance বা অজ্ঞতার যুগ বা আইয়ামে জাহেলিয়াত বলে অভিহিত করেছেন।

তখন আরবের সামাজিক অবস্থা ও বর্তমানে আমাদের সামাজিক অবস্থা

মাদকাসক্তিঃ জাহেলিয়া যুগে আরবরা ছিল অতিমাত্রায় মাদকাসক্ত। মাদোন্মত্ত হয়ে তারা নর্তকীদের সাথে অশ্লীল কাজে লিপ্ত হতো। ঐতিহাসিক খোদাবখশ বলেনঃ মদ্যপান,নেশাসক্তি,নারীহরণ প্রভৃতি চরম অনৈতিকতা আরবদের মধ্যে বিরাজমান ছিল।

নারীদের অবস্থাঃ জাহেলিয়া যুগে আরবে নারীদের কোনো সামাজিক মার্যাদার ছিল না। নারীকে পণ্যদ্রব্য এবং ভোগবিলাসের সামগ্রী মনে করা হতো। উত্তরাধীকারের সম্পত্তিতেও তাদের কোনো অধিকার ছিল না। পুরুষ কর্তৃক নারীরা সর্বত্র নিগৃহীত হতো্ তবে মক্কায় নারীদের মার্যাদা কিছুটা লক্ষণীয়। যেমন খাদীজা ও আবু জাহলের মা সে যুগে মার্যাদার অধীকারীনি ছিলেন।

বৈবাহিক অবস্থাঃ প্রাক-ইসলাম সমাজব্যবস্থায় সুষ্ঠু  বিবাহ প্রথা ছির না। পুরুষেরা যেমন একাধিক স্ত্রী ও উপপত্নী রাখতে পারত,তেমনি নারীরাও একাধিক পতি রাখতে পারত। একটি লোক যতো ইচ্ছা বিবাহ করতো এবং ইচ্ছামত তালাক দিতো। ভাই আপন বোনকে এবং পিতার মৃত্যুর পর বিমাতাকে বিয়ে করার কুপ্রথাও তাদের মাঝে প্রচলিত ছিল। বিমাতাকে বিয়ে করার এরূপ নীতি জ্ঞানবর্জিত কাজের উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের মধ্যে আয়াত নাযিল করেছেন।

কন্যা সন্তানের জীবন্ত সামাধিঃ প্রাক ইসলামী যুগে আরবরা কন্যা সন্তানের জন্মকে দুর্ভাগ্য ও লজ্জাকর মনে করতো । কখনো কখনো নিষ্ঠুরতার বশবর্তী হয়ে এ সকল নিস্পাপ কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিতে কুন্ঠাবোধ করতো না। তাদের এ নীতিজ্ঞান বর্জিত কাজের উল্লেখ করেও আল্লাহ তায়ালা আয়াত নাজিল করেছেন।

দাসত্ব প্রথাঃ জাহেলিয়া যুগে আরবে দাসত্ব প্রথা চালু ছিল। দাসদাসীদের কোনো সামাজিক মার্যাদা ও অধিকার ছিল না। পণ্যদ্রব্যের মত বাজারে কেনাবেচা হতো। দাসদাসীকে নির্মমভাবে কাজে খাটাত ও নির্যাতন করতো। তাদের জীবন মৃত্যু প্রভূর মর্জির উপর নির্ভর করত। বিয়েশাদীর অধিকারটুকুও তাদের ছিল না।

অভিশপ্ত সুদ প্রথাঃ জাহেলিয়া যুগে শোষণের অন্যতম হাতিয়ার সুদ প্রথাও আরবে চালু ছিল। লোকেরা মুষ্ঠিমেয় ধনিশ্রেনির চক্রবৃদ্ধি সুদের যাঁতাকলে নিস্পেষিত হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে  নিঃস্ব হয়েছিল। সুদ পরিশোধ করতে না পারলে ঋণগ্রহীতার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির সঙ্গে তার স্ত্রী পুত্রকেও দখল করে নিতো।

কুসংস্কারঃ জাহেলিয়া যুগে আরব সামাজে কুসংস্কার এতো বেশি প্রচলিত ছিল যে, তারা কোনো কাজ আরম্ভ করার পূর্বে তীরের সাহায্যে দেবমূর্তির সাথে পরামর্শ করতো। কোনো ব্যক্তি মারা গেলে এ বিশ্বাসে তারা কবরের পাশে উট বা ঘোড়া বেঁধে রাখত যে, মৃতব্যাক্তি এক সময় কবর থেকে উঠে অজ্ঞাত কোনো স্থানে বা স্বর্গের দিকে যাত্রা করবে।

ঘৃণিত যৌনাচার ও ব্যভিচারঃ জাহেলি যুগে আরবরা বিভিন্ন ধরনের ঘৃণিত যৌনাচার,বেপরোয়াভাবে ব্যভিচার ও নারী ধর্ষণে একান্তই অনুরাগী ছিল। এ প্রসঙ্গে মওলানা আকরম খাঁ বলেনঃ পুং মৈথুন,নারীর অস্বাভাবিক মৈথুন ও পশু মৈথুন এসব তাদের মধ্যে প্রচলিত ছিল এবং নির্দোষ বলে পরিগনিত হতো।  

উলঙ্গপনা ও বেহায়াপনাঃ জাহেলি যুগে আরবে উলঙ্গপনা ও বেহায়াপনা ছিল তাদের স্বভাব প্রসূত বিষয়। উলঙ্গ হয়ে কাবাঘর তাওয়াফ করাকে ইবাদত মনে করতো। সন্তান লাভের আশায় স্ত্রীকে অবাধে পর পুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে দিতো।

নিষ্ঠুরতাঃ জাহেলি যুগে আরবের নিষ্ঠুরতা এমন পর্যায়ে  পৌঁছেছিল যে, জীবন্ত মেষ,ভেড়া,উট প্রভুতি পশুর কোনো অঙ্গ থেকে ইচ্ছামত মাংস কেটে নিতো। নারীর সংখ্যা কমানোর উদ্দেশ্যে তাদেরকে ঘোড়ার লেজের সাথে বেঁধে ঘোড়া ছুটিয়ে দিতো্ মরণ আতঙ্কে চিৎকার করতে করতে নারীরা যখন মৃত্যুষন্ত্রনায় ছটফট করতো তখন পুরুষরা হৈ-হুল ও উল্লাস করে আনন্দ উপভোগ করতো।

জুয়া খেলাঃ জুয়া খেলা আরব সামাজে অবসর বিনোদনের একটি বিশেষ মাধ্যম ছিল। জুয়ার নেশাস তাদের এমন পাগল করে তুলত যে, দিগবিদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে নিজ স্ত্রী কন্যাকেও জুয়ার বাজি ধরে বসত।

লুটতরাজঃ লুটপাট,মারামারি,রাহাজানি,দাঙ্গা হাঙ্গামা ছিল জাহেলি আরবদের সামাজে নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। পরসম্পদ অপহরণ ও বলপূর্বক লুন্ঠন দারিদ্র্য পীড়িত বেদুনইনদের জীবনধারার সামিল ছিল।

বংশভিত্তিক কৈৗলীন্য প্রথাঃ আরবের বংশভিত্তিক সমাজব্যবস্থার কৌলীন্য প্রথা প্রসঙ্গে মওলানা আকরম খাঁ বলেন, প্রাক-ইসলাম যুগে সেখানে যে বংশগত ও গোত্রগত কৌলীন্য প্রথার প্রভাব অপ্রতিহতভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল, সে সম্মন্ধে কোনো সন্ধেহ নেই। এ বংশমর্যাদা নিয়ে বিভিন্ন গোত্রের লোকদের মধ্যে অহংকার,ঘুণা ও হিংসাবিদ্ধেষ ব্যাপকরূপে বিদ্যমান ছিল।

অসৎ গুনাবলির প্রসারঃ জাহেলিয়া সমাজের মানুষের মধ্যে আভিজাতের দম্ভ,আত্মম্ভরিতা,চরিত্রহীনতা,পরশ্রীকাতরতা,পরনিন্দা,পরচর্চা,হিংসা,অপরের কুৎসা রটনা ইত্যাদি অসৎ গুনাবলি মহামারির রূপ ধারণ করেছিল। আরবের মতো নৈতিক ও সমাজিক অধঃপতিত সমাজ সমকালীন বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায়নি।

সদগুনাবলিঃ জাহেলিয়াতের বিভীষিকায় নিমজ্জিত আরবদের মাঝে কতিপয় সদগুনও পরিলক্ষিত হতো। সাহসিকতা,স্বাধীন চেতনা,উদারতা,বদান্যতা,একনিষ্ঠতা,আতিথেয়তা,আর্শ্চযজনক স্মৃতিশক্তি,কাব্যচর্চা,বাগ্নিতা,আত্মসম্মানবোধ প্রভৃতি মহৎ গুণে তারা গুনান্বিত ছিল।

বিশেষ দ্রষ্টব্য” সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আমরা এতোক্ষন জাহেলিয়া যুগের যে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম একটু চিন্তাকরে দেখুন তো আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা এবং জাহেলিয়াতের সমাজ ব্যবস্থার মাঝে কতটুকু তফাত দেখতে পান..? কমেন্টে অবশ্যই আমাদেরকে আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি জানাবেন । ধন্যাবাদ।


 

Powered by Blogger.