Header Ads

ছয়টি বিশ্ববিখ্যাত ও বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থের ইতিহাস জানুন

 

 

আব্বাসী যুগে সংকলিত হাদীস গ্রন্থসমূহঃ  আব্বাসীদের শাসনামল ছিল হাদীস সংকলন ও বিশ্বব্যাপী এর প্রচার প্রসারের স্বর্ণযুগ। হাদীসের বিশ্ববিখ্যাত সংকলনসমূহ এ যুগেই প্রণীত ও গ্রন্থিত হয়। ছয়টি বিশ্ববিখ্যাত ও বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থ এ যুগেই সংকলিত হয়ে। এ যুগে সংকলিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিন্মে প্রদত্ত হলোঃ

১। সহীহুল বুখারীঃ

হাদীস গ্রন্থসমূহের মধ্যে সর্বাধিক খ্যাতিসম্পন্ন এবং সর্বাপেক্ষ বিশুদ্ধ হলো ইমাম বুখারী (রাঃ) কর্তৃক সংকলিত সহীহুল বুখারী। ইমাম বুখারী (রাঃ) এ গ্রন্থ সংকলনের কাজ শুরু করেন বায়তুল হারম তথা কাবাঘরে । পরবর্তীতে এর অনুচ্ছেদ ও অধ্যায় শিরোনাম রচনা করেন মসজিদে নববীর মিম্বার ও রাসুল (সাঃ) এর রওযা মুবারকের মধ্যবর্তী স্থানে বসে। ইমাম বুখারী (রাঃ) বলেন- আমি এসহীহ গ্রন্থে এক একটি হাদীস লেখার আগে গোসর করেছি এবং দু’রাকাত নফল সালাত পড়েছি। এতদ্ব্যতীত আমি একটি হাদীসও লিখিনি।

ইমাম বুখারী প্রায় ৬ লক্ষ হাদীস থেকে যাচাই বাছাই করে বিশুদ্ধতার নিরিখে বিশুদ্ধতম ৯০৮২টি হাদীস সংকলন করেন। যা থেকে মুতাবাত,মুকাল্লাত,ও মাওকুফাত বাদ দিলে সংখ্যা দাড়াবে ৭৩৯৭ টি। তবে আল্লামা আইনী (র) প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী হাদীস সংখ্যা ৭২৭৪ টি।

২। আস সহীহ লিমুসলিমঃ

বিশুদ্ধমত হাদীস সংকলন গ্রন্থসমূহের অন্যতম হলো আস সহীহু লিমুসলিম। বুখারীর পরেই এ গ্রন্থটির শ্রেষ্ঠত্ব প্রশ্নাতীত্ । ইমাম মুসলিম (রাঃ) তাঁর উস্তাদগন থেকে শ্রুত তিন লক্ষ হাদীস থেকে কঠোর শর্তের আলোকে যাচাইবাছাই করে মাত্র চার হাজার হাদীস নিয়ে এ সংকলন প্রনয়ন করেন। ইমাম মুসলিম (রাঃ) চ্যালেঞ্জ করে বলেনঃ মুহাদ্দিসগন যদি দু’শ বছর পর‌্যন্তও হাদীস লিখতে থাকেন,তবুও তাঁদের অবশ্যই এ সনদযুক্ত বিশুদ্ধ গ্রন্থের ওপর নির্ভর করতে হবে।

ইমাম মুসলিম (রাঃ) দীর্ঘ ১৫ বছর অবিশ্রান্ত সাধনা,গবেষনা ও যাচাইবাছাইয়ের পর সহীহ হাদীসমূহের এক সুসংবদ্ধ সংকলন তৈরি করেন। হাফেয কুরতুবী (রঃ) যথার্থই বলেছেনঃ ইসলামে এরূপ আরেকটি গ্রন্থ কেউ সংকলন করতে পারেনি।  সহীহ মুসলিমে পূনরাবৃত্তিসহ ১২ হাজার হাদীস সংকলীত রয়েছে। পুনরাবৃত্তি বাদ দিলে হাদীস সংখ্যা হয় প্রায় চার হাজার।   

৩। মুনানুল নাসায়ীঃ

ইমাম নাসায়ী (রাঃ) কর্তৃক প্রণীত হাদীস সংকলনের মূল নাম মুজতবা বা সঞ্চায়িতা। তবে সুনানুন  নাসায়ী নামেই গ্রন্থটি অধিক খ্যাত। ইমাম নাসায়ী (রাঃ) প্রথমে সুনানুন কুবরা নামক বৃতৎ সংকলন প্রণয়ন করে পরে তা হতে কঠোর শর্তাধীনে যাচাইবাছাই করে এ বিশুদ্ধ গ্রন্থ প্রণায়ন করেন। ইমাম নাসায়ী (রাঃ) বলেনঃ হাদীসের সঞ্চয়ন তথা মুজতবা নামের গ্রন্থটিতে উদ্ধৃত সকল হাদীসই বিশুদ্ধ। এ গ্রন্থে সর্বমোট হাদীস সংখ্যা ৪৪৮২ টি।

৪। সুনানু আবি দাউদঃ

ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীসগ্রন্থের অন্যতম হলো  সুনানু আবি দাউদ। ইমাম আবু দাউদ (রাঃ) প্রায় পাঁচ লক্ষ হাদীস হতে যাচাইবাছাই করে এ গ্রন্থে প্রণয়ন করেছেন। এ গ্রন্থে হাদীস সংখ্যা ৪৮০০ টি।

ইমাম আবু দাউদ (রাঃ) ফিকহী মাসয়ালার ধারাবাহিকতায় তাঁর এ সংকলনটি প্রণয়ন করেন। এ কারনেই ফিকহবিদগন বলেনঃ একজন গবেষকের পক্ষে ফিকহের মাসয়ালা বের করার জন্য আল্লাহর কিতাব কুরআনের পরে সুনানে আবু দাউদই যথেষ্ট।

৫। জামেউত তিরমিযীঃ

ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রাঃ) কর্তৃক সংকলিত গ্রন্থের নাম জামেউত তিরমিযী। তিনি ইমাম বুখারী ও আবু দাউদ (রাঃ) কর্তৃক প্রণীত গ্রন্থরীতির অনুসরণে এটি সংকলন করেন। বিভিন্ন বিষয়ের জরুরী হাদীস সমূহ এ গ্রন্থে সুন্দরভাবে সজ্জিত করে দেয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রাঃ) নিজ প্রণীত গ্রন্থের মার্যাদা সম্পর্কে দাবি করেনঃ  যার ঘরে এ কিতাবখানা থাকবে,মনে করা যাবে,তার ঘরে স্বয়ং নবী (সাঃ) অবস্থান করছেন ও কথা বলছেন। তিরমিযী গ্রন্থের হাদীস সংখ্যা ৩৮১২টি।

৬। সুনানু ইবনে মাজাহঃ

হাদীসশাস্ত্রের এক মূল্যবান সংকলন হলো সুনানু ইবনে মাজাহ্। আল্লামা আবদুল্লাহ ইবনে মাজাহ আল কাযভিনী (রাঃ) কর্তৃক প্রনীত এ গ্রন্থের হাদীস সংখ্যা চার হাজার। সুনানে ইবনে মাজাহ গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য মূলত দুটি। যথাঃ

ক। গ্রন্থটিতে এমনভাবে হাদীস সমূহ গ্রন্থিত হয়েছে যে, কোনো হাদীসের পূনরাবৃত্তি ঘটেনি।

 

খ। এ গ্রন্থে অনেক বিশুদ্ধ হাদীস বর্নিত হয়েছে, যা সিহাহ সিত্তার অন্য কোনো গ্রন্থে নেই। আল্লামা আবুল হাসান সানাদী (রঃ) বলেন,অনেক বৈশিষ্ট্য থাকা সত্বেও সিহাহ সিত্তার অপর পাঁচটি গ্রন্থের তুলনায় সুনানু ইবনে মাজাহ গ্রন্থের যয়ীফ হাদীসের সংখ্যা বেশি। এ কারণে এ গ্রন্থটির অবস্থান সিহাহ সিত্তার সর্বশেষ ক্রমিকে।

৭। মুসনাদে আহমদঃ

এটি ইমাম আহমদ ইবনে হাস্মল (রাঃ) কর্তৃক সংকলিত গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদীস সংকলন। এতে ত্রিশ হাজার হাদীস (পূনরাবৃত্তিসহ) রয়েছে। গ্রন্থটি পাঁচ খন্ডে বিভক্ত। মহানবী (সাঃ) এর গুরুত্বপূর্ণ সকল হাদীস এতে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

৮। আল মুসতাদরাকঃ

মুহাদ্দিস হাকেম নিসাপুরী (রঃ) আল মুসতাদরাক গ্রন্থের সংকলক। বুখারী ও মুসলিম প্রণীত  হওয়ার পর অবশিষ্ট সহীহ হাদীস সমূহ সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে তিনি এ গ্রন্থটি সংকলন করেন। ইমাম হাকেম (রঃ) বুখারী ও মুসলিমে উল্লেখিত কঠোর মতের তুলাদন্ডে ওজন করে অবশিষ্ট বিশুদ্ধ হাদীস সমূহ তাঁর গ্রন্থ প্রকাশ করেন।

৯। আল ইলযামাত এবং কিতাবুস সুনানঃ

ইমাম দারে কুতনী, আলী ইবনে ওমর ইবনে আহমদ (রঃ) উল্লিখিত গ্রন্থ সংকলন করেন। তিনি ইমাম হাকেম কর্তৃক প্রণীত মুসতাদরাকের সমমানের গ্রন্থ হিসেবে এ গ্রন্থদ্বয় সংকলন করেন।

১০। মুসনাদে ইবনে হাব্বানঃ

এ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য হাদীস গ্রন্থসমূহের অন্যতম হলো আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে হাব্বান (রঃ) এর সংকলন। আল্লামা খতীব বাগদাদী (রঃ) লিখেনঃ ইবনে হাব্বান অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সুবিন্যাস্ত হাদীস বর্ণনাকরী ছিলেন। তাঁর বহু সংখ্যাক হাদীসগ্রন্থও আছে।     

১১। আল মুজামঃ ইমাম তাবারানী (রঃ) কর্তৃক সংকলিত হাদীস গ্রন্থের নাম আল মুজাম। এটি তিন খন্ডে প্রণীত প্রতিটি খন্ডের পৃথক পৃথক নাম। যথাঃ

ক। মুজামুস সাগির ।  খ।  মুজামুস কাবির।  গ। মুজামুল আওসাত।

১২।  তাহাবীঃ

আল্লামা আবু জাফর তাহাবী (রঃ) কর্তৃক সংকলিত তাহাবী শরীফ চতূর্থ শতকের অন্যতম উল্লেখযোগ্য হাদীস অকাট্যরূপে প্রমাণের লক্ষ্যে এতদবিষয়ক বিশুদ্ধ হাদীস সমূহ এ গ্রন্থে সংকলন করেন।

 ১৩। মাসাবীহুস সুন্নাহঃ

 ইমাম হোসাইন ইবনে মাসউদ আল দাগাভী এ গ্রন্থটি সংকলন ও সম্পাদন করেন।  এতে প্রথমে সহীহ অতঃপর হাসান প্রভৃতি হাদীস সংযোজিত হয়। এ গ্রন্থটির গুরুত্ব ব্যাপক। পরবর্তী পর‌্যায়ে এটির আধুনিক সংস্করণ করে নামকরণ করা হয়ঃ মেসকাতুল মাছাবিহ।

১৪। জামেউল মাসানীদ আল আলকাবঃ

 ইমাম আবুল ফারয আল জাওযী  কর্তৃক সংকলিত হাদিসগ্রন্থ জামেউল মাসানীদ আল আলকাব। এতে ‍বুখারী,মুসলিম,মুসনাদে আহমদও তিরমিযী শরীফ থেকে হাদীস সংগ্রহ করা হয়েছে।

১৫। বাহরুল আসানীদঃ

এ গ্রন্থটি ইমাম হাফেয আল হাসান ইবনে আহমদ সমরকন্দ কর্তৃক সংকলিত। এ গ্রন্থটিতে এক লক্ষ হাদীস সন্নিবেশিত হয়েছে।


আব্বাসী যুগে আরো অনেক হাদীস গ্রন্থ সংকলিত ও সম্পাদিত হয়েছিল এর মধ্যে সহীহ  আল মুতাকা,মুনতাকাল আখবার ফিল আহকাম,আস সুনানুল কুবরা,আল আহকামুস সুগরা,উমদাতুল আহকাম,আত তারগীব ওয়াত তারহীব ইত্যাদির নাম উল্লেখযোগ্য।

Powered by Blogger.