ডাঃ জাকির নায়েকের ভ্রান্ত মতবাদ
আল্লাহকে ব্রাহ্ম,বিষ্ণু, নামে ডাকা যাবেঃ-
ইয়াহুদি-খৃষ্টান ধর্মের প্রচারণার ন্যায় ডাক্তার জাকির নায়েকের কনফারেন্সে
হিন্দুধর্মের বিভিন্ন বিষয়েও আপত্তিকর প্রচারণার চালানো হয়েছে। সেখানে
হিন্দুধর্মের বিষয় এমন ভাবে প্রচার করা হয়েছে যে,হিন্দুরা তাতে অভিভুত হয়ে পড়েছে।
এমনকি হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে ডাঃ জাকির নায়েক সাফাই গেয়েছেন এবং সেগুলো
সম্পর্কে সমর্থন প্রকাশ করেছেন। স্ররষ্টার পরিচয় দিতে গিয়ে ডাঃ জাকির নায়েক হিন্দুদের পরিভাষাকে সমর্থন করে কথা
বলেছেন। আর তার এ কথা শুনে হিন্দুধর্মের অনুসারীরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে
বলেছেনঃ- “আমরা আমাদের হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে গত ৪০ বছরে যা জানতে পারিনি,
সেগুলো এখানে চার ঘন্টায় জানতে পারলাম”।(ডাঃ জাকিএ নায়েক লেকচার সমগ্র ভলিয়ম নং২/২৩২পৃঃ)।এভাবে
তিনি বিভিন্ন বিষয়ে সাফাই গেয়েছেন এবং সেগুলোকে সমর্থন জানিয়েছেন।
ইসলামী শরিয়াতের হুকুম হচ্ছেঃ- মহান আল্লাহকে তাঁর সত্তাগত নাম হিসাবে “আল্লাহ” নামে ডাকতে হবে অথবা যদি
তাঁকে গুনগত নামে ডাকা হয়, তাহলে তিনি নিজের জন্য যেসকল নাম নির্ধারণ করেছেন,তাকে
সেই নামেই ডাকতে হবে,যা মহান আল্লাহর ৯৯ নামরুপে হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে। আর মহান
আল্লাহর কোন বিশেষ গুন নির্দেশ করতে এমন কোন শব্দে আল্লাহ তায়ালাকে সম্মোধন করা
যাবেনা-যা বিধর্মীরা তাদের দেবতাদের বুঝাতে ব্যবহার করে। এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে-
মহান আল্লাহকে ব্রাহ্ম,বিষ্ণু, প্রভুতি নামে ডাকা যাবে না। কেননা,এ নামদ্বারা
বহুঈশ্বরবাদী হিন্দুদের দেবতাদের, যা থেকে মহান আল্লাহ অতিপবিত্র। তাই মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেনঃ
(ওয়াদারুল্লাযিনা ওলহিদুনা ফি আসমায়িহি শায়ুযযাওনা মা কানু ইয়ায়মালুনা)
অর্থাৎঃতাদেরকে বর্জন কর যারা আল্লাহর নামের ব্যাপারে সীমালংজ্ঞন করে।
অচিরেই তারা যা করে চলেছে তাঁর ফল পাবে। (সুরা আরাফ-১৮০)।কিন্তু জাকির নায়েক বলেঃ
আল্লাহকে ব্রাহ্ম,বিষ্ণু, নামে ডাকা যাবেঃ।এমন কি তিনি বলেনঃআল্লাহকে যে কোন নামে
ডাকা যাবে তবে তা সুন্দর হতে হবে। জাকির নায়েকে লেকচার ভলিয়ম ২,৩৮০পৃঃ। এমন ভাবে
তাঁর বিভিন্ন লেকচারে আল্লাহকে বুঝাতেগিয়ে বহু স্থানে “ঈশ্বর” ব্যবহার করেছেন। অথচ
আল্লাহর ৯৯ নামের মধ্যে “ঈশ্বর” নেই। অধিকন্ত এটি
বিধর্মীদের পরিভাষা। তাই এ শব্দ মুসলমানগণ ব্যবহার করতে পারেনা। উক্ত বইয়ে “ঈশ্বর শব্দের ছড়াছড়ি
দেখুনঃ- ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস- মহান ঈশ্বর মানুষের রুপ ধারন করেন না। অন্য স্থানে
আছে “ ঈশ্বর তথা আল্লাহর
সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া হয়েছে কোরান
মাজিদের সুরা ইখলাসে চারটি আয়াতের মধ্যে। তিনি আর বলেনঃএ সংজ্ঞা দিয়েছেন স্বয়ং
আল্লাহউ সুবহানাহু তায়ালা সর্বশক্তিমান ঈশ্বর।
ব্রাহ্ম, বিষ্ণু,ঈশ্বর,ভগবান, এসমস্ত নামের বিপরীত লিজ্ঞ হয়েছে। মহান
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “ওয়ালিল্লাহিল আসমায়ুল হুসনা ফাদয়ুহু বিহা ওয়া যারুল্লাজিনা য়ুলহিদুনা ফি
আসমায়ি”
অর্থাৎঃ তাঁর সুন্দরতম পাক নাম সমুহ রয়েছে সে নামেই তাহাকে সম্বোধন কর এবং
যারা তাঁর অন্য নাম পরিবর্তন করে সম্বোধন করে তাহাদিগকে ত্যাগ কর। (সুরা-
আরাফ-১৮০)।
ইসলামে চার জন মহিলা নবী এসেছিলঃ-
ডাঃ জাকির নায়ে বলেনঃ উপরে উল্লিখিত দৃষ্টিকোন থেকে ইসলামে চারজন মহিলা
নবি এসেছেন।...তারা হলেনঃ বিবি মরিয়ম(রাঃ)বিবি আছিয়া(রাঃ)বিবি ফাতেমা(রাঃ)ও বিবি
খাদিজা(রাঃ)আশাকরি প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।
(ডাঃ জাকির নায়েক লেকচার,১/৩৫৫পৃঃ)। এটা ডা জাকির নায়েকের ভ্রান্ত
থিউরি।আল্লাহ তায়ালা বিশেষ হিকমতের জন্য,পৃথিবিতে নবি হিসাবে শুধু পুরুষদেরকে
মনোনিত করেছেন, কোন মহিলাকে নয়। ইসলামের আক্বীদা হচ্ছে- পৃথিবীতে মহান আল্লাহ শুধু
পুরুষের মধ্যে থেকে নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন।কোন মহিলাকে নবী করে পাঠান হইনি। আর নবি
নন রমন কোন ওলীয়ে কামেল-বুযুর্গকে কোনরূপ দৃষ্টিকোন থকে নবি বলা যাবে না। জাহেল
জাকির নায়িক নবি হওয়ার কি গুনাবলি রয়েছে শর্তাবলি রয়েছে তা না যেনে ভূয়া বক্তব্য
পেশ করে যাকে ইচ্ছা তাকে নবি বানাচ্ছে যেই, নবী মানে যারা পূরঃপবিত্র থাকেন।
নাউযুবিল্লাহ!! ইসলামীক শরিয়াতে কোন সময়ই নারি নবি ছিলেন না। নবি মানে উম্মতের
ইমাম হ্ওয়া অথচ রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন, সে জাতি কখনই সফল হবে না যারা তাদের
শাশনভার কোন নারীর হাতে অর্পণ করেন। (বুখারী,১০ খন্ড,৬৬১৮ নং হাঃ)। নবি ওই ধরনের
সম্মানিত মানব কে বলা হয় ,যার কাছে হেদায়াতের জন্য আল্লাহতায়ালা ওহী পাঠিয়েছেন।
শরহে আলাইদ,৯৪পৃঃ। নবিগন সবাই পুরুষ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কোন মহিলা বা জ্বিন ছিল
না।(সুরা জ্বিন ,শরহে আকাইদ২৯পৃঃ)।আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের ইমাম আবুল হাসান আশ’আরী(রঃ) বলেনঃ মহিলাদের
মধ্যে কেউ নবি ছিলেন না। (ইবনে কাছির ৪/৩৬২পৃঃ)। বুঝা গেল জাকির নায়েকের
আকিদা আহলে সুন্নি জামায়েতের বিরোধী এতে
সন্দেহ নেই। অপরদিকে উক্ত কথার দ্বারা জাকির নায়েক প্রখান্তরে গোলাম আহম্মদ
কাদিয়ানীর মত রাসুল (সাঃ)এর খতমে নবুয়াতের উপর আঘাত হেবেছে। ভন্ড নবি দাবিদার
গোলাম আহম্মদ কাদিয়ানী যেমন বিশেষ দৃষ্টিকোনে নবি তথা “যিল্লি নবী” দাবি করেছে, তেমনি উক্ত
বর্নায় ডাঃ জাকির নায়েক রাসুল(সাঃ)এর নবুয়তের পরে বিবি ফাতেমা(রাঃ) ও বিবি মা খাদিজা(রাঃ)কে “বিশেষ দৃষ্টিকোনে নবি” সাব্যস্ত করেছেন। তাই
জাকির নায়েক কাফির বলে সাব্যস্ত হবেন এতে কোন সন্দেহ নেই।
*সাহাবীগণ রাসুল (সাঃ)এর নামে মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করেছেনঃ-
ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেনঃ রাসুল
(সাঃ) এর ইন্তেকালের পরে তারা কেউ কেউ রাসুল (সাঃ) এর নামে মিথ্যা হাদিস বর্ণনা
করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ)। দেখুন ডাঃ জাকির নায়েকের মুল ভাষ্য “পরবর্তীতে যখন তিনি
ইন্তেকাল করলেন আর লোকজন যখন তাঁর কথাগুলো ইদ্ধৃতি শুরু করলো এবং কেউ কেউ এমন কথাও বলতে শুরু করলো- যা নবীজি
বলেননি...।সুত্রঃজাকির নায়েক লেকচার ভলিয়ামঃ৫,৭৬ পৃঃ।
দেখুন ডাঃ জাকির নায়েক কতবড় জঘন্য
উক্তি করেছেন লক্ষ করুন। নবীজি ওফাতের পরে পরবর্তীতে কারা জীবিত ছিল তা সকলেরই
জানা , আর কাফেররা তাঁর নামে মিথ্যা বলা এটা তো স্বাভাবিক বিষয়। এখানে সে এটা
আলোচনা করেন নি। মুসলমানদের আকিদা হচ্ছে রাসুল (সাঃ) এর মহান সান্নিধ্যপ্রাপ্ত
সাহাবীগণ সত্যের মাপকাঠি।তারা কখনও রাসুল(সাঃ)এর নামে মিথ্যা হাদিসের প্রচার
করেনি। রাসুল (সাঃ) এর জীবদ্দশায় নয় এবং তাঁর ওফাতের পরও নয়। তারা সকলেই জানত
নবীজির নূরানী জবানের এ হাদিস যেঃ- যে আমার নামে মিথ্যারোপ করবে যে কথা আমি বলিনি,সে
যে নিজেরঠিকানা জাহান্নামের স্থাপন করলো।সহি বুখারি২/৮০পৃষ্ঠাঃহাঃ১২৯১। বুঝাগেল
সাহাবিদের প্রতি এটি জাকির নায়েকের অপবাদ।
তারা দিনের জন্য নিবেদিত প্রাণ মহান আল্লাহর মনোনীত জামা;আত। তারা দ্বীনকে যথাযথভাবে
পালন করেছেন এবং উম্মতের নিকট পৌছিয়েছেন। তাইতো মহান আল্লাহ তাঁদের প্রতি
সন্তষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন। সাহাবিগন(রাঃ) কখনও রাসুল(সাঃ) এর নামের মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করেননি। ডাঃ জাকির নায়েক
তাঁদের বিরুদ্ধে অবান্তর মিথ্যাচার করেছেন।
নারী-পুরুষ সবার মসজিদে ই’তিকাফ করতে পারবেঃ-
ডাঃ জাকির নায়েক বলেনঃ- নারীদের ঘরে ই’তিকাফ করার ব্যাপারে কোন
প্রমান নেই।(জাকির নায়েকের লেকচার সমগ্র,৫/৪০৩পৃঃ)
তিনি আরো বলেনঃ- “মসজিদে ই’তিকাফ করতে হবে এবং এই নিয়ম নারীপুরুষ সকলের জন্য
সমান।(ডাঃ জাকির নায়েকের লেকচার সমগ্র,৫/৪০২) ।
আমি একাধিকবার আলোচনা করেছি যে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে ফিতনা ফাসাদের
আশঙ্কা ছিল কম। তাই নবিজির স্ত্রী আমাদের জননীগণ মসজিদে ই’তিকাফ করতেন বলে কোন বর্ণনায় পাওয়া যায়; তাও অস্পষ্ট। কেননা আমাদের
মা আয়েশা(রাঃ) হতে বর্ণনা রয়েছে যে, নবীজির বিবিগন তাঁদের হুজুরা শরিফে অবস্থান
করতেন।
হযরত আয়েশা(রাঃ) বলেন রাসুল (সাঃ) ইতিকাফে অবস্থায় থাকলে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়িতে
প্রবেশ করতেন না। (বুখারি শরীফ৩/৪৮,মুসলিম শরিফ,১/২৪৪) । বুঝাগেল নবীজির বিবিগন
তাঁদের খাস হুজরা শরুফে ই;তিকাফ করতেন।
অন্য হাদিসে আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন ,রাসুল (সাঃ) বলেন ঃরাসুল (সাঃ)যখন
ই;তিকাফের সিদ্ধান্ত নিতেন,তখন সালাতু ফাজর আদায় করতেন তারপর তাঁর ই’তিকাফের স্থানে প্রবেশ
করতেন।বুঝাগেল নবিজি তাঁর বিবিগন কে রেখেই ইতিকাফে আসতেন। সকলেরই জানা উচিত যে
মহিলাদের সংস্পর্শে থেকে বিরত থাকা ই’তিকাফের একটি শর্ত। যেমন মা হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত
,তিনি বলেনঃ ই’তিকাফকারী সে কোন অসুস্থ মানুষের দেখতে যাবে না, কোন জানাজায় উপস্থিত হবে
না,স্ত্রীকে স্পর্শ করবেনা,স্ত্রী সঙ্গম করবে না,। (আবু দাউদ,আস সুনান২/৩৩৩)।
তাই ই;তিকাফের অন্যতম একটি সর্তই হল নারীদের স্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে।
যদিও নারিরা পর্দা করে মসজিদে ই’তিকাফ করে তাঁর পরেও পুরুষের মনে ওয়াসওয়াসা আসতে পারে।
আর তাতে বরং ফিতনা বেড়ে যাওয়ার আশংকা থেকে।